মতিন রহমান,বকশীগঞ্জ(জামালপুর)প্রতি
জামালপুরের বকশীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান সড়ক ও ফুটপাতগুলো এখন অবৈধ দখলদারদের কবলে। যত্রতত্র দোকানপাট আর যানবাহনের বিশৃঙ্খল পার্কিংয়ের কারণে এই অঞ্চলের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনেও একই চিত্র দেখা যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
বকশীগঞ্জ বাজারের চিত্র এখন এমনই যে, পথচারীদের জন্য হাঁটার জায়গা নেই বললেই চলে। জামালপুর-বকশীগঞ্জ এবং বকশীগঞ্জ-রৌমারী আঞ্চলিক মহাসড়কের অংশবিশেষসহ পৌরসভার ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যেমন পুরাতন বাসস্ট্যান্ড বটতলা মোড় থেকে মধ্য বাজার রোড, উত্তর বাজার থেকে দক্ষিণ বাজার মোড়, মধ্য বাজার মোড়, বড় মসজিদ রোড ও পুরাতন গরুহাটি রোডের ফুটপাত ও সড়কের সিংহভাগই অবৈধ দখলে চলে গেছে। ফলমূল, কাঁচাবাজার ও মাছের বাজারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা, যা দখল করে রেখেছে ফুটপাতের একটি বড় অংশ।
অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে রাস্তাগুলো এমনিতেই সরু। তার ওপর এই অবৈধ দখলের ফলে যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এতে একদিকে যেমন মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
বকশীগঞ্জ উলফাতুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনেও সড়কের চিত্র একই। মাছের বাজার ও ফলের দোকানের সারি ফুটপাত দখল করে রেখেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্কুলের সামনেই এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং যানজটের কারণে তাদের স্কুলে যাতায়াত করতে অত্যন্ত কষ্ট হয়।
দশম শ্রেণির ছাত্রী পৃথিবী তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, “আমাদের স্কুলের ঠিক সামনেই প্রতিদিন মাছের বাজার বসে। স্কুলে আসতে গেলেই মাছের আঁশটে আর পচা গন্ধে নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। তার ওপর রাস্তা দখল করে বাজার বসানোর কারণে প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে। স্কুলের সামনে এত নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমাদের পড়াশোনাও ব্যাহত হচ্ছে। এই দুর্ভোগ থেকে আমরা দ্রুত মুক্তি চাই।
রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, অটোরিকশার যত্রতত্র পার্কিং এবং ফুটপাত দখলের কারণে পথচারীদের চলাচল রীতিমতো দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছু মার্কেটের মালিক টাকার বিনিময়ে পৌর এলাকার ফুটপাত ও সড়কের ওপর অবৈধ দোকানপাট বসানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন। এই বিষয়টি একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা হলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান চালালেও, অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই দখলদাররা পুনরায় ফুটপাত দখল করে তাদের ব্যবসা শুরু করে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা এই প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই দখলদাররা আবার ফিরে আসে। এটি একটি চক্রের মতো কাজ করছে। আমরা এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান বের করার চেষ্টা করছি, যাতে পৌরবাসী নির্বিঘ্নে যানজটমুক্ত চলাচল করতে পারে।
বকশীগঞ্জ উপজেলার খাতেমুন মঈন মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক, কবি,গবেষক ও প্রাবন্ধিক রজব বকশী এই পরিস্থিতির একটি স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বকশীগঞ্জ বাজারের ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনেও যখন মাছের বাজার বসে, তখন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি হয়। পৌরসভা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে যাতে উচ্ছেদের পর আবার দখল না হয়। একটি আধুনিক শহরের জন্য ফুটপাত ও সড়কগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা জরুরি।
ভুক্তভোগী পৌরবাসীও এই দীর্ঘদিনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।